প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে সমাজ, সংস্কৃতি আর সভ্যতা। চারপাশের মানুষ গুলোও কেমন যেন বদলে যাচ্ছে। আমিও অনেক বদলে গিয়েছি। এতো কিছু বদলের মূল কারণ নাকি প্রযুক্তির অদম্য ছুটে চলা। প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, গবেষণা এসবেই তো গরম এখনকার চায়ের টেবিল। নতুন প্রযুক্তি গুলো একটু পরখ করে তো দেখতেই হয়, হোক না আমার ছেঁড়া কাঁথা।
সেদিন পাশে বাড়ির বড়লোক বৌদি এসেছিলো। পান চিবাতে চিবাতে আমার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলো। ওমা! হাতে একটা চকচকে স্মার্টফোনও ছিলো। বললাম বৌদি আগের ফোনটা তো ভালই ছিলো এটা আবার কবে কিনলে। বৌদি একটু অহংকারের সূরে আঁচল ঝাকিয়ে বলে উঠলো, তোর ভাই গেল সপ্তাহে আমার ফেসবুক খুলে দিয়েছে আর সেই উপলক্ষেই এই ফোনটা। এটা দিয়ে ফেসবুক চলাই।
বৌদি যাওয়ার সময় বলে গেলো তাদের বাড়িতে যেন যাই। কি যেন বললো স্মার্ট টিভি না কি কিনেছে, সুন্দর ছবি দেখা যায়। বৌদি যেতে না যেতেই মা ডেকে নিয়ে চেচামেচি শুরু করে দিলো। টিনের চালা ফুটো হয়ে জল গড়িয়ে পরতে শুরু করেছে, যেকোন মূল্যে চালায় নতুন টিন দিতেই হবে।
রাখো তো মা তোমার ফুটো চালা, ও একটু কষ্ট করলে কিছু হবে না। আমরা এখন ডিজিটাল যুগের মানুষ আমাদের কি ফুটো চালা নিয়ে পরে থাকলে চলে। গতমাসে প্রাইভেট পড়িয়ে যা পেয়েছিলাম ঐটা দিয়ে মেশিন লার্নিং এর একটা ওয়ার্কশপে রেজিস্ট্রেশন করেছি, কত নামিদামি মানুষ আসবে, প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলবে। একটু পর বন্ধু রুবেল মটর সাইকেল নিয়ে আসবে, ওর সাথে ওয়ার্কশপে যাবো। তোমরা তো আর কিছু করতে পারলে না, আমাদের কাজ আমাদের করতে দাও। গরিব ঘরে জন্মেছি বলে তো পিছিয়ে পরলে চলবে না, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
কি-জানি বাপু কি সব যে তোরা করিস। শুধু টাকা নষ্ট করা।
আমি এক আবেগী দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তরুণ প্রযুক্তিপ্রেমী। আমার দেশের লাখো লাখো তরুণদের একজন প্রতিনিধি আমি, যাদের হাতেই রচিত হচ্ছে আগামীর ভবিষ্যৎ। অনেক বড় স্বপ্ন আমাদের । যেকোন প্রতিকূলতা মারিয়ে দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে দৃঢ় সংকল্প আমরা। আমাদের মতো পজিটিভ চেতনা আর কারো নেই। গোবরে পদ্মফুল হয়ে আমরা মাধুর্য ছড়াবো খুব শিঘ্রই।
আমাদের দোষ কোথায়, পজিটিভ চিন্তা করা কি খারাপ কিছু?
আবেগ দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায় না, আর এক লাফে এভারেস্টে ওঠাও যায় না। প্রয়োজন বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা। পাশের বাড়ির বৌদির জন্য স্মার্টফোন আর স্মার্ট টিভি বাস্তব সম্মত হলেও আমার জন্য বাস্তবতা হচ্ছে ঘরের চালায় নতুন টিন। এতে আমার পরিবার যেমন খুশি থাকবে আর আমিও আমার লক্ষ্য পুরণে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবো। আমার জন্য মেশিন লার্নিং এর ওয়ার্কশপ নয় বরং প্রোগ্রামিং সি শেখার একটা বই আর একটা সাধারণ মানের কম্পিউটার হয়তো বাস্তব সম্মত প্রয়োজন। তবেই আমি দিনে দিনে প্রযুক্তিচর্চায় অভিজ্ঞ হয়ে উঠার রাস্তাটা তৈরি করতে পারবো। হয়তো একদিন আমার বাড়িতেও থাকবে অত্যাধুনিক সব ডিভাইস।
এখন ইন্টারনেট সহজলভ্য তাই কোন দেশে কি হচ্ছে তা মূহর্তেই পৌঁছে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ট্রেন্ড পরিবর্তিত হচ্ছে আর আমরা আবেগী বোকারা ছুটছি আজ এটা তো কাল অরেকটার পেছনে। গত ৫-৭ বছর আগে তরুণরা ছুটেছিলো আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার আর ওয়েব এপ্লিকেশন এর পেছনে। তারপর আসলো গ্রাফিক্স, এনিমেশন, মোবাইল অ্যাপ, গেম-ডেভেলপমেন্ট আর ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি। ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ-ডাটা এসবও এখন বেশ পুরোনো। কদিন আগে জোয়ার ছিলো রোবটিক্স আর IoT র। আর এখন এসব পেছনে ফেলে সবাই মেতেছে মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডিপ লার্নিং নিয়ে। আমাদের আবেগ আমাদের বুঝতেই দেয় না যে আমি এখনো প্রোগ্রামিং সি-ই শিখে উঠতে পারিনি । ধাপে ধাপে এখনো পাড়ি দিতে হবে অনেকটা পথ।
যেখানে ইন্ডাস্ট্রি ৩ ই আমরা বুঝিনা সেখানে আমরা প্রস্তত হচ্ছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য।
আমার দৃষ্টিতে সফল হিসেবে যাদেরকে চিনি তারা অনেক বেশি ব্যাকডেটেড। খোঁজ নিয়ে ভালো করে দেখন ওনারা এখনো আটকে আছেন একটা দুটো জিনিসেই। আজ হাসিন হায়দার ভাইয়ের একটা ভিডিও দেখছিলাম তিনি বলছিলেন ১৬ বছর ধরে তিনি PHP নিয়েই আছেন। জেমস মার্টিন নামে একজন ভদ্রলোককে আমার প্রায় ১০ বছর আগে ভালো লেগেছিলো । তখন তিনি সলিড ওয়ার্কস এ মেশিন ডিজাইন করতেন আর একটা কম্পানিতে চাকড়ি করতেন আর এখনও তিনি সলিড ওয়ার্কস এ মেশিন ডিজাইন করেন। এতদিনে তার নিজের একটা ঠিকানা হয়েছ। নিজের কম্পানিতে তিনি এখন রুটি মেশিন তৈরি করেন এবং নতুন কিছু মেশিন তৈরির জন্য প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে চলেছেন । আমি ! আমি এখনো টগবগে তরুণ তাই একবারেই ঘটাবো বিশাল এক বিপ্লব, সেই প্রত্যাশাতেই আছি ।